আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮/১১/২০২৩ ৩:০৭ পিএম

টানা কয়েকদিন সেনা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মিয়ানমারের কাওলিন শহরের দখল নিয়েছে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীরা। সোমবার কাওলিনের নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহীদের হাতে ছেড়ে দিয়ে সেনা বাহিনী পিছু হটেছে বলে রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে দেশটির জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ)।

মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ে অবস্থিত কাওলিন কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। কারণ কাওলিন জেলার সামরিক প্রশানিক কার্যালয়ের সদর দপ্তরের অবস্থান এই শহরেই। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করেন কাওলিনে।

যেহেতু জেলার সামরিক প্রশানিক কার্যালয়ের শহর কাওলিনে, তাই এই শহরটির দখল করা মানে এক অর্থে পুরো কাওলিন জেলার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক জোট নাগ একই সঙ্গে নিজেকে দেশটির ছায়া সরকার বলেও দাবি করে। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় নাগের প্রধানমন্ত্রী মান উইন খাইং থান বলেন, ‘জেলা শহর কাওলিন এখন আমাদের দখলে। কী যুগান্তকারী একটি বিজয়!’

এক্সে এটি ভিডিওচিত্রও পোস্ট করেছেন খাইং থান। সেখানে দেখা গেছে— কাওলিন সামরিক প্রশাসনিক কার্যালয়ের সেনা সদস্যরা কার্যালয়ের সামনে বিদ্রোহী জোট নাগের পতাকা উত্তোলন করছেন।

এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে জান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি।

কাওলিন শহরের ২৮ বছর বয়সী এক বাসিন্দা নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে এবং এই সংঘর্ষের আঁচ থেকে আত্মরক্ষা করতে কাওলিনের অধিকাংশ মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়েছেন।

‘শহরে আর কোনো নিরাপদ স্থান নেই। প্রায় সবাই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে,’ বলেছেন সেই বাসিন্দা।

২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়ে সরকার গঠন করেছিল। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি); কিন্তু সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালে ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং সেই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

ক্ষমতা দখলের পর বন্দি করা হয় এএলডির শীর্ষ নেত্রী অং সান সুচিসহ দলটির অধিকাংশ উচ্চ ও ও মাঝারি পর্যায়ের নেতা ও আইনপ্রণেতাদের। এখনও তারা কারাগারে রয়েছেন।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ অবশ্য সামরিক বাহিনী এ পদক্ষেপ একেবারেই মেনে নেয়নি। বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ও বাণিজ্যিক রাজধানী নেইপিদোসহ দেশটির ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণভাবে তা দমনের চেষ্টা করলেও এক সময় বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় জান্তা।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে হাজারেরও অধিক মানুষের এক পর্যায়ে গণতন্ত্রপন্থীরা জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিতে থাকেন, গঠিত হয় ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা নাগ।

বেলজিয়ামভিত্তিক থিংকট্যাংক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড হোরসি অবশ্য মনে করছেন নাগ বেশিদিন এই শহর দখলে রাখতে পারবে না।

‘মিয়ানমারের যে বাস্তবতা, তাতে কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পক্ষে পার্বত্য অঞ্চলের কোনো প্রাদেশিক শহর দখল করে নেওয়া তেমন কঠিন নয়; তবে দীর্ঘসময় ধরে তা দখলে রাখা খুব কঠিন।’

সূত্র : রয়টার্স

পাঠকের মতামত